<p>মাতা-পিতা হয়েছেন বলে যে আপনি সন্তানের প্রতি আপনার কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করবেন ব্যাপারটা এমন নয়। আপনি আপনার সন্তানের যাবতীয় অধিকার বুঝিয়ে দেবেন। কেননা অভিভাবক হিসেবে আপনি অবশ্যই কামনা করবেন যে আপনার সন্তান আপনার জন্য পৃথিবী ও পরকাল উভয়জীবনে গৌরবের কারণ হোক।</p>
সন্তানের যেমন তার অভিভাবকের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে তেমনি অভিভাবকেরও তার সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। আসুন জেনে নেই একজন সচেতন অভিভাবকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য - ১. সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করাঃ সন্তানকে শাসন করা তো অভিভাবকের আবশ্যিক কর্তব্য বটে, তবে সেই শাসন যেনো অতিমাত্রায় না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখাও অভিভাবকের দায়িত্ব। সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা, তার মন-মানসিকতা বুঝে কথা বলা, কোন বিষয়টি তাকে আনন্দ বা পীড়া দিচ্ছে এসকল বিষয়ে লক্ষ্য রাখাও একজন সচেতন অভিভাবকের দায়িত্ব। ২. নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের উপর চাপিয়ে না দেওয়াঃ সন্তানের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিজের সিদ্ধান্ত তার উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকেন তাহলে সন্তানের যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাটি হ্রাস পাবে। সে বিভিন্ন দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগবে যা তার ব্যক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলবে। অতএব এটি একটি নেতিবাচক দিক। ৩. সন্তানের সিদ্ধান্ত বা মতামতকে গুরুত্ব দেওয়াঃ
প্রত্যেক মানুষেরই নিজ নিজ মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার থেকে আপনার সন্তানও বঞ্চিত নয়। নিজ সিদ্ধান্ত বা মতামত প্রকাশ আপনার সন্তানের ব্যক্তিত্ব প্রকাশেও সহায়তা করবে।
৪. সন্তানের প্রতিপালনঃ সন্তানকে যথাযথ প্রতিপালন করা মাতা-পিতার অপরিহার্য কর্তব্য। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো অভিভাবকের কর্তব্য। সন্তানের মৌলিক অধিকারে কৃপণতা না করে সেগুলো পূরণ করা আবশ্যক। ৫. সঠিক বন্ধু নির্বাচন করাঃ সন্তানের বন্ধু নির্বাচনে আপনাকেও সতর্ক থাকতে হবে। সে কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, সঠিক পরিবেশে থাকছে কি না এসকল দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে। ৬. সন্তানের বিনোদনের সুযোগ করে দেওয়াঃ
সারাদিন পড়াশোনার মধ্যে থাকলে সব শিক্ষার্থীদেরই একঘেয়েমি চলে আসে। তাই তাদেরকে বিনোদনের সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ। সপ্তাহে বা মাসে অন্তত একবার বাহিরে যাওয়া, খেলাধুলার জায়গা বা শিক্ষনীয় স্থান দর্শন করা উচিৎ। ৭. এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে উৎসাহিত করাঃ একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সংগীত, নৃত্য, অংকন, আবৃত্তি ইত্যাদি বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে আপনার সন্তানকে উৎসাহিত করুন। এটি আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৮. পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি কমিক্স, গল্প বা কবিতার বই পড়াতে উৎসাহিত করাঃ পাঠ্যবই যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গল্প, কবিতা বা উপন্যাসের বইও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে এসকল বইসমূহর গুরুত্ব অপরিসীম। ৯. সন্তানকে অপরের সাথে তুলনা না করাঃ তুলনা - ব্যাপারটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন আপনার সন্তানের সহপাঠীদের সাথে যদি আপনি বার বার তুলনা করে তাকে ছোটো করে থাকেন তাহলে তার আত্মবিশ্বাস হ্রাস পাবে, মানসিকভাবে সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তাই কারো সাথে তুলনা করা এড়িয়ে চলতে হবে। ১০. শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়াঃ শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার শিক্ষা আমরা সকলেই পারিবারিকভাবেই পেয়ে থাকি। তবে এই শিক্ষা ধরে রাখাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ যা শুধুমাত্র অভিভাবকের দিকনির্দেশনার মাধ্যমেই ধরে রাখা সম্ভব। ১১. সন্তানের শিক্ষকদের সাথে কেমন আচরণ ও সম্পর্ক তৈরি করতে হবে তার শিক্ষা দেওয়াঃ
শিক্ষদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের শিক্ষা দেওয়া ও অভিভাবকদের দায়িত্ব। এছাড়া বড় ছোটো এবং সমবয়সীদের সাথে আন্তরিকতা প্রকাশের শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।
১২. আপনার সন্তানকে "Child Abuse" সম্পর্কে অবগত করাঃ
বর্তমানে এটি খুবই সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ মেয়ে শিশুদেরকে এই বিষয়ে অবগত করা অতীব জরুরি। কোন স্পর্শের কি অর্থ তা বুঝানো, অপরিচিতদের সাথে কোথাও না যাওয়া, কার সাথে কেমন সম্পর্ক এসব সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত করা সকল অভিভাবকের অবশ্য করনীয়।
আপনার সন্তানকে সুস্থ ও সুন্দর জীবন দান করার ক্ষমতা একমাত্র আপনার হাতেই সীমাবদ্ধ। তাই একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো যথাযথভাবে পালন করুন।
Ronok Zahan Oishy
Nice Blog