<p>ভলান্টিয়ারিং, ক্লাবিং অথবা সেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করা নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করে থাকেন। আমাদের দেশে অসংখ্য সুপরিচিত সেচ্ছাসেবী সরকারি, বেসরকারি সংগঠন রয়েছে যাদের সাথে যুক্ত হয়ে অসংখ্য কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং তার পাশাপাশি আমাদের দেশের ছাত্রসমাজেরও এক লক্ষনীয় উন্নতি হয়েছে।</p>
বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকে। চলুন জেনে নিই সেসকল প্রশ্নের উত্তর।
১। ক্লাবিং ও এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিসের উপকারিতা কী?
প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অনেকে নিশ্চয়ই যুক্ত আছেন এমন বিভিন্ন দলের সঙ্গে। আবার অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, ক্লাব বা সংগঠনে কাজ করা মানে সময় নষ্ট, পড়ালেখার ক্ষতি। ইত্যাদি নানান মতপার্থক্য। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা আপনার কর্মজীবনে অনেক সহায়তা করবে। অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে আপনার উপযুক্ত কোন একটি সংগঠনে কাজ করেই দেখুন না!
২। শিক্ষার্থীরা কেন সংগঠনে যুক্ত হবেন?
সংগঠনগুলো আমাদেরকে বেশ কিছু স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত কাজ শিখিয়ে থাকে। সফট স্কিল বা হার্ড স্কিল যা-ই বলুন না কেন, দুটোই কিন্তু জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগে আর সংগঠনগুলোর মাধ্যমে স্কিলগুলো খুব সহজেই ডেভেলপ করা যায়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল সোসাইটির মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীর মতে, 'সুস্থ সংগঠনগুলোতে চর্চার মাধ্যমে ইতিবাচক গুণাবলি তৈরি হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে। নেতৃত্বগুণ তৈরি হয়। ধরুন, একটা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী হয়তো নাচ-গান-আবৃত্তি কিছুই জানে না, দেখবেন তবু সে একজন “সংগঠন না করা” মানুষের চেয়ে আলাদা।'
৩। নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা কিভাবে তৈরী হয়?
এক্ষেত্রে সরাসরি একজনের উদাহরণ দিয়েই বিষয়টা পরিষ্কার করা যায় - বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেন রাজধানীর আপডেট ডেন্টাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওসামা বিন নূর। যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাত থেকে ‘কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া এই তরুণ স্বয়ং এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, নেতৃত্বের পুরো ব্যাপারটা তিনি সংগঠন থেকে পেয়েছেন। ওসামা মাদ্রাসায় পড়েছেন। তবে নেতৃত্বের জায়গায় নিজেকে তৈরি করেছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে। তিঁনি আরোও বলেন, ‘মতামত জানানো, প্রোগ্রামের বাজেট তৈরি, স্পনসর জোগাড় করা—এসব করতে করতে অবচেতনে একটা প্রশিক্ষণ হয়ে যায়, যেটা পেশাজীবনে কাজে আসে।’ সংগঠনে জড়িত থাকার ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস-দূত হিসেবেও কাজ করার সুযোগ মেলে। তাই পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম একে অপরের সহায়ক।
৪। ক্লাব অথবা সংগঠনের মৌলিক বিষয়গুলো কি?
প্রতিটি ক্লাব বা সংগঠনের মৌলিক বিষয় একই। যেমন সবার মতকে শ্রদ্ধা করা। এমনকি যারা কম্পিউটার বা রোবট ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত, তারা নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দ উপভোগের সুযোগ পায়। এছাড়াও -
১. উচ্চশিক্ষায় বাড়তি সুবিধা।
২. নির্ভয়ে সবার সামনে দাঁড়াবার মানসিকতা।
৩. মানতে শেখায় সময়ের ভারসাম্য।
৪. নতুন এবং অজানা কে জানার আগ্রহ তৈরী।
৫. সামাজিকতা বৃদ্ধি।
৬. চিন্তাধারার পরিবর্তন ইত্যাদি।
৫। কেমন সংগঠনে যুক্ত হবেন?
কে কী ধরনের সংগঠনে যুক্ত হবে, বিষয়টি সম্পূর্ণ নিজের পছন্দের ওপর নির্ভর করে। কেউ বিতর্ক করবে, কেউ আলোকচিত্রী হবে, কেউ আবার মূকাভিনয় কিংবা বিজনেস ক্লাব বা রোবটিকস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হবে। আবৃত্তির সংগঠন, নাটকের দল ইত্যাদি নানা দিকেই মানুষের আকর্ষণ থাকতে পারে। আবার কেউ রক্তদান সংগঠন, ত্রানকেন্দ্র বা চ্যারিটেবল সংস্থায় কাজ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন। যে সংগঠন আমাদের পরিবার, ধর্ম, সমাজ—সর্বোপরি দেশের জন্য সাংঘর্ষিক নয়, নিশ্চয়ই এমন সংগঠনেই যুক্ত হওয়া উচিৎ।
পড়ালেখার চাপ, আসাইনমেন্ট, পরীক্ষা এবং শিক্ষকদের শাসনের কারণে অনেকেই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ছাত্রজীবন থেকে মুক্তি পেতে চান। জীবনের সব চাইতে কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায় পড়ালেখা করার বিষয়টি। মনে হতে থাকে কতো দ্রুত ছাত্রজীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় এই ছাত্রজীবন। কারণ এর পরবর্তী জীবনে পা দেয়ার সাথে সাথে পাল্টে যায় পুরো পৃথিবী।যারা কর্মজীবনে রয়েছেন তারা সকলেই ফিরে পেতে চান তার হারিয়ে যাওয়া খুশিগুলো।
পরিশেষে বলতে পারি, আমরা যারা ছাত্রজীবন অতিবাহিত করছি তারা উল্লেখিত এমন নিরস আর মিসম্যানেজমেন্টে পরিপূর্ণ জীবনটাকে সঠিকভাবে ম্যানেজমেন্ট করা শিখতে চাইলে ক্লাবিং বা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের তুলনা হয় না এবং তা অবশ্যই হতে হবে রাজনীতিমুক্ত, ব্যক্তিনিরপেক্ষ এবং শতভাগ কর্মতৎপর সংগঠন।